– মাহদী হাসান রিয়াদ

জীবনটা অদ্ভুত। বিচিত্রময়। হাজার রহস্যে ঘেরা৷
মানুষ জন্মের পর থেকে সুখ খুঁজে, সুখী হতে চায়। সুখের সন্ধানে দৌঁড়ে বেড়ায়। কেউ সুখ খুঁজে পায়, কেউবা আবার সুখ হারায়। এভাবে চলছে জীবন, ঘুরছে জীবনের চাকা।

সুখ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা পোহাতে হয় এই সমাজের যুবকদের। একদিকে পরিবার, অন্য দিকে ক্যারিয়ার। যেভাবেই হোক, প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে সুখী হতে হবে।
‘ক্যারিয়ার’ যার সহজ বাংলা তরজমা হচ্ছে— ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’। এই একটি শব্দ রীতিমতো পাগল বানিয়ে ছাড়ছে যুবসমাজকে। অধিকাংশ লোকজন দেউলিয়া হয়ে দৌঁড়ছে ক্যারিয়ারের পেছন-পেছন। যেকোনো মূল্যে যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে। অথচ, দিনশেষে ভাঙছে মেরুদণ্ড। নিস্তেজ হচ্ছে যৌবন। ভাগছে বউ। বাড়ছে দুখ, হারাচ্ছে সুখ। বেচারা দেখতে পায় না আর শান্তির মুখ। জানি না, কবে যে সমাজের ইজারাদারদের বিবেকের ঘুম ভাঙবে। এই সহজসরল জিনিসটা নিয়ে তারা ভাববে। আল্লাহ মালুম।

বর্তমানে প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্কে জড়ানো খুব সহজ৷
রেস্টুরেন্ট কিংবা পার্কে বসে প্রেমিকার সাথে আড্ডা দেয়া যেন হাতের মোয়া। রুম ডেটে যাওয়া তো সহজলভ্য, খুব সাধারণ কিছু। দুটোর একটাও যদি কপালে না জুটে, তার জন্য রয়েছে পতিতালয়। মাত্র দুই-তিনশো টাকা খরচ করলেই মিটবে যৌন চাহিদা। যদি তা-ও সম্ভব না হয়, ওই হতভাগার জন্য রয়েছে পর্ন সাইট। এভাবে কোনোনা-কোনো মাধ্যমকে পূঁজি করে ক্ষুধার্থ যুবকেরা দিব্যি উপভোগ করছে যৌনতার স্বাদ। নিবারণ করছে যৌন ক্ষুধা। এর ফলে অকালে হারাচ্ছে যৌবন। ব্যর্থ হচ্ছে বৈবাহিক জীবনে স্ত্রীর চাহিদা মেটাতে। বাড়ছে ঝগড়া-কলহ। ঢল নামছে পরকীয়ার। হিড়িক পড়ছে বিচ্ছেদের।

২০১৫ সালে করা ‘এক্সট্রিম টেকের’ জরিপে দেখা গেছে গড়ে প্রতি মাসে অ্যাডাল্ট সাইট ভিউ হয় ৪৪০ কোটি বার।
১৩ বছর আগে গোটা দুনিয়ায় মোট ৭০ হাজারের মত পর্ন সাইট ছিল। সেই পরিসংখ্যা ২০১৫ সালে এসে দেখা যায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই পর্ন সাইটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ লক্ষে। গোটা দুনিয়ায় এ সংখ্যা ২০ কোটিরও অধিক। তৎক্ষালীন সময়ে প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বে প্রায় ৩ কোটি মানুষ পর্ন দেখতেন বলে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে।
তবে, বর্তমানে এর পরিসংখ্যান যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা ধারণা করাও অসম্ভব।

এইতো গেল কেবল পর্নোগ্রাফির কথা। কিন্তু, যারা প্রেম নামক অবৈধ সম্পর্ক আর পতিতালয়ে গিয়ে সেক্স করছে, তাদের পরিসংখ্যান যে কত, আল্লাহ ভালো জানেন৷ অথচ আমাদের সুশীল পিতা-মাতার চোখে ২২/২৩ বছরের ছেলে-মেয়েরাও নাকি বাচ্চা। বলন ভঙ্গিমায় বোঝা যায়, পিডার খাওয়ার উপযোগী।
দিনশেষে তাঁদের কচি ছেলে-মেয়েরা যে জিনা করে বাড়ি ফিরছে, রাতের আঁধারে বয়ফ্রেন্ডের সাথে নগ্ন ছবি আদান-প্রদান করছে
সে ব্যাপারে যেন খুব উদাসীন।

সমাজের প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী একজন যুবক তার স্ত্রীর ভরনপোষণ আদায় করার পূর্ণ সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও সে বিয়ে করতে পারে না! সমাজের ইজারাদাররা বানিয়ে রেখেছে নতুন রীতি। দশ-বিশ ভরি স্বর্ণ আর বিশ-ত্রিশ লাখ টাকার কাবিন ছাড়া বিয়ের কথা মুখে নেয়া যাবে না। কণে পক্ষ তার মেয়েকে বানিয়ে রেখেছে বাজারের পণ্য। তাই দুই পক্ষের মধ্যে চলতে থাকে দরকষাকষি।
স্রস্টারা হয়তো ভুলেই গেছেন, দাম্পত্য জীবন নাকম এই সম্পর্ক সৃষ্টির প্রধান ভিত্তিই হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। রোজ তিন বেলা ভালোবাসা খেয়ে এই সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হতে থাকে। অন্যতায় যতই বেড়িবাঁধ দেননা কেন, কোনো এক ঘুর্ণিঝড় এসে কাবিন নামক বেড়িবাঁধের অস্তিত্ব বিলীন করে দেবে। কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে, ব্যবসায়ীক চিন্তাধারা থেকে যদি ভাবেন, চোখধাঁধানো কাবিননামা অবশ্যই যৌক্তিক। এখন কথা হচ্ছে, আপনার মেয়েকে কী ব্যবসায়ীক পণ্য বানিয়ে ছেড়ে দেবেন, নাকি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার সাগরের নাবিক বানাবেন, সে সীদ্ধান্ত একান্তই আপনার। এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমরা রাখি না।

করজোড়ে অনুরোধ করছি, সমাজের এই বিরাট সমস্যাটা নিয়ে ভাবুন। সুস্থ মস্তিষ্কে ভাবুন। ক্ষুধার্ত যুবক-যুবতীদের ক্ষুধা নিবারণ করার সুযোগ করে দিন। এতে করে আপনার আদরের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে। তারা কুপথে যাবে না। গোনাহ থেকে বাঁচবে। তাদের চাপাকান্না থামান। প্রতি রাতে তাদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে যায়। একটু বুঝুন, তাদের নিদারুণ আর্তনাদের কষ্ট। নয়লে মালিকের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সেদিন আপনার আদরের সন্তানই আপনার বিরুদ্ধে মালিকের আদালতে মামলা দায়ের করবে। তখন কোনো সদুত্তর আপনার কাছে থাকবে না। পাকড়াও হবেন। অপরাধী হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হবে সন্তানের সামনে৷